ইংরেজি ভাষায় নির্মিত আন্তর্জাতিক সিরিজ ‘সিটাডেল’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করার পর, ভারতীয় দর্শকদের জন্যও এর ভারতীয় সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে প্রিয়াংকা চোপড়া অভিনয় করেছিলেন মূল সিরিজে, এবার ‘সিটাডেল: হানি বানি’ সিরিজের হিন্দি সংস্করণে প্রধান চরিত্রে রয়েছেন বরুণ ধাওয়ান এবং সামান্থা রুথ প্রভু। পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রাজ নিধিমারু এবং কৃষ্ণ ডি কে, যাদের আগের কাজ ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সফল সিরিজ ছিল। তাদের দক্ষতার প্রমাণেই সম্ভবত এই নতুন সিরিজটিও দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
সিরিজের কাহিনি: গুপ্তচর সংস্থার সংঘর্ষ
‘সিটাডেল: হানি বানি’ সিরিজটি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গুপ্তচর সংস্থার গল্প তুলে ধরেছে, যার মূল আকর্ষণ হলো—অ্যাকশন, গুলি চালানো, গাড়ি ধাওয়া, এবং রক্তের বন্যা। মূল কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বনির (বরুণ ধাওয়ান) এবং হানির (সামান্থা রুথ প্রভু) সম্পর্ক, যারা একসময় গুপ্তচর সংস্থার সদস্য ছিল এবং পরে একে অপরের কাছে আসেন। তবে, সিরিজের মূল গল্পের দিকে তাকালে, এর পরিপূর্ণতা শুধুমাত্র এই সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দুই গুপ্তচর সংস্থার মধ্যে চলা রেষারেষি ও প্রতিযোগিতাতেই।
বনি, যিনি একসময় মুম্বাইয়ের স্টান্টম্যান ছিলেন, পরবর্তীতে বাবার (কেকে মেনন) গুপ্তচর সংস্থার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। হানি, দক্ষিণী অঞ্চলের বাসিন্দা, যিনি নিজেকে মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে এসেছিলেন, সেখানেই বনির সঙ্গে পরিচিত হয়ে গুপ্তচর সংস্থায় যোগ দেন। তাদের সম্পর্ক গাঢ় হতে হতে, তাদের মধ্যে এক কন্যারও জন্ম হয়, যার নাম নাদিরা।
এদিকে, কাহিনির গাঢ়তার পেছনে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ‘সিটাডেল’ প্রযুক্তি, যা একটি গুপ্তচর সংস্থা তৈরি করছে, কিন্তু তার গুরুত্ব সীমিত—এটি মূলত গল্পের পটভূমি হিসেবে কাজ করছে। সিরিজের কাহিনির মূলে রয়েছে সংস্থার ক্ষমতা এবং একে অপরকে হারানোর লড়াই।
অ্যাকশন ও সহিংসতার উপকথা
‘সিটাডেল: হানি বানি’ পুরোপুরি অ্যাকশন নির্ভর একটি সিরিজ। প্রতিটি পর্বে গুলি চালানো, গাড়ি ধাওয়া, মারধর, এবং রক্তপাতের দৃশ্য রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর। তবে, একেবারে শুরু থেকেই কিছু অতিরিক্ত সহিংসতা এবং আবহের নির্দয় আস্ফালন নিয়ে দর্শকদের প্রস্তুত থাকতে হয়। সিরিজটির নির্মাতারা মনে করেছেন, ভারতীয় দর্শক শুধুমাত্র অ্যাকশন দৃশ্যগুলোকেই গ্রহণ করবেন, যখন তার সঙ্গে থাকবে অতিরিক্ত সহিংসতার টানটান আবহ।
যদি আপনি ৬ ঘণ্টার একেবারে অ্যাকশন-ভিত্তিক সিরিজ দেখতে প্রস্তুত থাকেন, তবে ‘সিটাডেল: হানি বানি’ আপনার জন্যই। কিন্তু সিরিজটি শুধুমাত্র ধাওয়া, গুলি এবং রক্তপাতেই শেষ হয় না। গল্পের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির যে সূক্ষ্ম বুদ্ধির খেলা থাকা উচিত ছিল, সেটি অনেকাংশেই অনুপস্থিত। ভারতীয় দর্শকদের সম্পর্কে নির্মাতাদের যে ধারণা, তাতে তারা হয়তো ভাবেন, একমাত্র শারীরিক সহিংসতা এবং উত্তেজক দৃশ্যই দর্শকদের মনোরঞ্জন করবে, কিন্তু এর মাধ্যমে শৈল্পিক গভীরতা কিছুটা হারিয়ে গেছে।
সামান্থা ও বরুণের রসায়ন
বরুণ ধাওয়ান এবং সামান্থা রুথ প্রভু অভিনীত জুটি খুবই তাজা এবং নতুন। তাদের সম্পর্ক এবং চরিত্রের মধ্যকার বৈচিত্র্য পুরো সিরিজের মধ্যে এক ধরনের সজীবতা এনে দিয়েছে। বিশেষ করে, বরুণ ধাওয়ানের চরিত্র বনি এবং সামান্থা রুথ প্রভুের চরিত্র হানি—দুজনের সম্পর্কের গাঢ়তা এবং কেমিস্ট্রি দেখার মতো। সিরিজটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তাদের মেয়ের চরিত্র, কশভি মজুমদার যিনি নাদিরা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
শেষ কথা: গুপ্তচর গল্পের প্রতি নতুন দৃষ্টিকোণ
‘সিটাডেল: হানি বানি’ সিরিজটির কাহিনি শেষ পর্যন্ত গুপ্তচর সংস্থার লড়াইয়ের ওপরই কেন্দ্রীভূত থাকে। সম্পর্কের ছোট উপকাহিনিগুলো ছিল অনেক সম্ভাবনাময়, তবে সেগুলোকে আরো গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হলে হয়তো সিরিজটি আরো হৃদয়গ্রাহী হতে পারত। এই সিরিজের শক্তি নিশ্চয়ই তার অ্যাকশন এবং উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যে, তবে গল্পের গভীরতা এবং চরিত্রগুলোর বিকাশে আরও মনোযোগ দেওয়া হলে তা দর্শকদের জন্য আরও চমকপ্রদ হতে পারত।
এটি যে কোনও সিরিজের প্রথম পরিচ্ছেদ, সেটি মাথায় রেখে, নির্মাতাদের জন্য সামনে আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিরিজের মতো সফল প্রয়োগের পর, হয়তো পরবর্তী পর্বগুলিতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে সিরিজটির আবেগীয় এবং চরিত্রভিত্তিক দিকগুলোকে। তবে আপাতত, অ্যাকশন এবং উত্তেজনা ছাড়া এর কিছু বিশেষ আবেদন তৈরি হয়নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন